উদ্যোক্তা ডেস্ক
কিভাবে শুরু করবেন ব্যবসা : একটি ভালো ক্ষুদ্র ব্যবসা একটি আইডিয়ার বা ধারণার মাধ্যমেই শুরু হয়। কিন্তু শুধু আইডিয়া নিয়ে বসে থাকলে হবে না, কাজ শুরু করে দিতে হবে। অনেকেই ব্যবসা শুরু করতে নানা ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। ব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন- এই ভেবে অনেকে দিনের পর দিন পার করে দেন। কিন্তু শুরু করাটা আমরা আসলে যত কঠিন ভাবি ঠিক ততটা নয়। শুরু করে দিলেই কাজগুলো সহজ মনে হয়।

যেকোনো বড় লক্ষ্যের মতো আপনি যদি কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগ করে শুরু করে দেন, তাহলে সবকিছু সহজেই সামাল দিতে পারবেন। নিচে এমন ছয়টি ধাপের কথা উল্লেখ করা হলো যাতে করে আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাটি এখনই শুরু করে দিতে পারেন।
এক পৃষ্ঠার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লিখুন
যেকোনো ক্ষুদ্র বা স্টার্টআপ ব্যবসায় সফল হওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে, সবকিছু সহজ এবং কম খরচের মধ্যে করা। এখানে খরচ বলতে শুধু টাকা নয়, সময়ও বুঝায়।
অনেক উদ্যোক্তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী ব্যবসা পরিকল্পনা করার ফাঁদে পড়ে যান। যখন আপনি কোথাও বড় আকারের বিনিয়োগ বা অর্থায়ন করতে চাচ্ছেন তখনই বেশ শক্তসামর্থ পরিকল্পনা দরকার। আপনার যদি ক্ষুদ্র কোনো কিছু শুরু করতে চান তাহলে আমাদের পরামর্শ হবে আইডিয়া পরীক্ষা না করে সময় ও অর্থ বিনিয়োগ না করা।
তাই নিজের সহজ, এক পৃষ্ঠার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা করে আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাটি শুরু করুন।
- আপনার ভিশন (কল্পনা বা দূরদর্শিতা ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ) ঠিক করুন: আপনার ব্যবসার সর্বশেষ অবস্থা কি হবে তা নির্ধারণ করুন।
- আপনার মিশন (নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ) ঠিক করুন: প্রতিষ্ঠানের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। প্রতিষ্ঠানটি কেন শুরু করতে চান তার কারণ ব্যাখ্যা করুন।
- উদ্দেশ্যগুলো নির্ধারণ করুন: কি করতে যাচ্ছেন, লক্ষ্য কি তা নির্ধারণ করুন। এটিই আপনার মিশন ও ভিশন সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করবে।
- প্রতিষ্ঠানের মৌলিক রুপরেখা তৈরি করুন: আপনার উদ্দেশ্যগুলো কিভাবে অর্জন করবেন সেটা চিহ্নিত করুন।
- সহজ কর্ম পরিকল্পনা লিখুন: বর্ণিত উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে ছোট ছোট কর্মপদ্ধতি লিখুন।
উপরের বিষয়গুলো লিখতে এক পৃষ্ঠার বেশি প্রয়োজন হবে না। কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবসায়িক পরিকল্পনার চেয়ে এটি আরো বেশি সুসংগঠিত ও সংক্ষিপ্ত হবে।
বাজেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত
বাজেটের ক্ষেত্রে আমাদের জোর পরামর্শ হবে, খরচ যত কমিয়ে আনা যায়। তবু আপনাকে শুরু করার জন্য বাজেটের বিষয়ে পরিষ্কার একটি ধারণা থাকতেই হবে, কত টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে সক্ষম আপনি। যদি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন দিয়ে শুরু করেন, তাহলে আপনাকে সংখ্যা বা পরিমাণের বিষয়ে অনেক বাস্তববাদী হতে হবে- বাজেট যাই হোক না কেন। আমি দেখেছি এতে বাস্তবসম্মত বাজেটের চেয়ে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ব্যবসায়ে লাভের মুখ দেখা পর্যন্ত প্রতি মাসে যে খরচ হবে তাও বাজেটে উল্লেখ থাকতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধরে নিতে হবে, এক থেকে তিন মাস আপনি লাভের মুখ দেখবেন না। তবে এরচেয়ে বেশি সময়ও লাগতে পারে; তার জন্যও বাজেট পর্যাপ্ত থাকতে হবে।
বৈধ কাগজপত্র
ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন), মূল্য সংযোজন কর(মূসক বা ভ্যাট) নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরির প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্যও নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা টাকা খরচ হবে। অঞ্চল ভেদে এ খরচের তারতম্য হতে পারে। যেকোনো ব্যবসা শুরুর আগে কি কি কাগজপত্র লাগবে? এবং তার জন্য কত খরচ হতে পারে সেটা আগেই জেনে নিতে হবে।
আর্থিক বিষয়ে সতর্কতা
ব্যবসা শুরু করার জন্য যে সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করেছেন তার জন্য তহবিল পৃথক করে রাখুন। একসঙ্গে সব খরচের টাকা রাখলে ঝামেলা হতে পারে। আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব থেকে ব্যবসার জন্য টাকা পৃথক করে রাখুন। প্রয়োজনে ব্যবসার জন্য আলাদা একটি ব্যাংক হিসাব খুলে রাখুন।
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন
আপনার টার্গেট ক্রেতারা যদি শুধু পাড়া বা মহল্লার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, ব্যবসার ব্যাপ্তি বিস্তৃত হলে তাহলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন। আজকাল খুব কম খরচে ভালো মানের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। আর যদি অনলাইনে ব্যবসা শুরু করার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন তাহলে আকর্ষণীয় ও ব্যবহারবান্ধব একটি ওয়েবসাইট আপনার জন্য খুবই উপযোগী।
পরীক্ষামূলক বিক্রয়
আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি সেবামূলক হয় তাহলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন বা সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের কাছ থেকে ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন। আর আপনার যদি পণ্যভিত্তিক ব্যবসা হয় তাহলে ফুটপাত বা রাস্তার ধারে, কৃষি মার্কেট বা অন্যান্য জনাকীর্ণ স্থানে পণ্যের প্রদর্শনী করুন। ক্রেতারা আপনার পণ্য কিনবে কিনা বা পণ্য সম্পর্কে তাদের ধারণা জানার চেষ্টা করুন।খুব প্রয়োজন হলে ফেসবুক, গুগলে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
আপনি খুব সহজেই উপরের এই ছয়টি ধাপ অনুসরণ করতে পারেন। এর জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না। আপনার কষ্টের সব টাকা ও সময় একটি অপ্রমাণিত আইডিয়ার পেছনে বিনিয়োগ করার আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য এই ধাপগুলো চমৎকার কাজে দেবে। খুব বেশি না ভেবে আজই কাজ শুরু করে দিন আপনার স্বপ্নের ব্যবসা বাস্তবায়নে।
সূত্র: এন্ট্রিপ্রিনিউর ডটকম