‘৪০০ টাকার গ্যাস লাগে। পাইলাম মাত্র ১০৪ টাকার গ্যাস। কী যে কইতাম?’ দীর্ঘ লাইনে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর চাহিদামতো গ্যাস না পেয়ে এভাবে হতাশা প্রকাশ করেন সিএনজি অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ তৈয়ব। গতকাল রবিবার বিকেল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগ ও আতুরারডিপো এলাকার মাঝামাঝি এমআইবি ফিলিং স্টেশনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, প্রতিদিন ৪০০ টাকার গ্যাস ভরলে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকা আয় করা যায়। গত শনিবার সিএনজি স্টেশন বলেছে, ১২০ টাকার বেশি গ্যাস নেওয়া যাবে না। এই গ্যাসে এক হাজার টাকার ট্রিপও হয় না। এভাবে গ্যাসসংকট চলতে থাকলে অটোরিকশা চালানো কঠিন হবে।
নগরের প্রায় সব ফিলিং স্টেশনে গত দুই দিন ধরে গ্যাসসংকট চলছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছে না। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের টেক্সটাইল, টাইগারপাস, পলোগ্রাউন্ডের সামনে, ষোলশহর, ওয়াসা, পাঁচলাইশ এলাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর সামনে সড়কে ও ভেতরে অটোরিকশার দীর্ঘ সারি দেখা যায়। গ্যাসসংকটে অটোরিকশা চলা কমে গেছে।
এই সুযোগে অনেক অটোরিকশাচালক ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।
চকবাজার এলাকায় ফোরকান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা কম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে একটা পেয়েছি। আগ্রাবাদ থেকে এখানে আসতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া। কিন্তু গাড়ি কম থাকায় আজ ১৬০ টাকা নিয়েছে।
বাসা-বাড়িতেও গ্যাসসংকটে রান্নায় সমস্যা হচ্ছে। নগরের চকবাজার, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, জামালখানসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চুলা জ্বলেনি। অনেক এলাকায় গ্যাস না থাকায় হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনতে হয়েছে।
মাইজপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাসরিন ফেরদৌস বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করে। এ সময় সকালের নাশতার জন্য রুটি তৈরি করছিলাম। তিনটি রুটি তৈরি করতে না করতে গ্যাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে সবার ভাত খাওয়া বন্ধ। বিকেল ৩টার পর গ্যাস আসতে শুরু করে। স্বাভাবিক হতে হতে বিকেল সাড়ে ৪টা।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, ‘ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়িতে লাইনের গ্যাস ছিল না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্যাসসংকটের কারণে মানুষ দুর্ভোগ পোহায়ছে।’
পূর্বঘোষণা ছাড়াই ফিলিং স্টেশন ও বাসা-বাড়িতে (আবাসিক) গ্যাসসংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শফিউল আজম খান গতকাল বলেন, মহেশখালী থেকে এলএনজি সরবরাহ আগের চেয়ে কমে গেছে। চাহিদামতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে দৈনিক গড়ে ৩১০ থেকে ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে আজ (রবিবার) ২৮০ থেকে ২৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। গ্যাস সংকটের বিষয়টি পেট্রোবাংলা ভালো বলতে পারবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, দেশে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) চাহিদা রয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আন্তর্জাতিক বাজারের স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমানে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে। আগে প্রতি মাসে মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনালে তিনটি কার্গোতে এলএনজি আসত। দাম বাড়ার পর সেখানে চলতি মাসে একটি কার্গোতে এলএনজি আসে। আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও একটি করে কার্গোতে এলএনজি আসার কথা। প্রতি মাসে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় মূলত গ্যাসের সংকট। এটি শুধু চট্টগ্রামেই নয়, দুই দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে।