স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। আজ বুধবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সৌদি আরব ও ইসরায়েল আগ্রহী বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
এরপর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিবৃতি দিল। এতে বলা হয়েছে, কারবির ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনের বিষয়ে নিজেদের দৃঢ় অবস্থানের কথা ওয়াশিংটনকে পরিষ্কার করতে এ বিবৃতি দেওয়া হলো।
২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইনের সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সৌদি আরব নীরব সম্মতি জানিয়েছিল। এর পর থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়।
সৌদি আরবের নীতিনির্ধারণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র গত বছরের অক্টোবরে রয়টার্সকে বলেছিল, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যেসব পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আপাতত কিছু ভাবছে না সৌদি আরব। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এমন স্থিতাবস্থা তৈরি হয়েছে।
এদিকে এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। ব্লিঙ্কেন বলেন, সৌদি যুবরাজ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁর আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে তিনি চান গাজায় যুদ্ধের অবসান হোক।
গত সোমবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠক হয়। এর পরদিন গতকাল দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন এসব কথা বলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি নিয়ে যুবরাজ সৌদি আরবের ব্যাপক আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে তিনি এটাও পরিষ্কার করেছেন, যেমনটা তিনি এর আগেও আমাকে বলেছিলেন যে তা করতে গেলে দুটি বিষয় প্রয়োজন। তা হলো, গাজায় সংঘাতের নিরসন এবং একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার জন্য স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট সময়সীমার একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণ।’
সৌদি আরব কখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হওয়া আব্রাহাম চুক্তিতেও যুক্ত হয়নি দেশটি। এ চুক্তির আওতায় মরক্কোসহ উপসাগরীয় প্রতিবেশী দেশ বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
সৌদি আরবকেও একই কাতারে যুক্ত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সৌদি বাদশাহ সালমানের ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই মূলত নেপথ্যে থেকে সৌদি আরবের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন বলে মনে করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে রিয়াদের পক্ষ থেকে শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে আছে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাবিষয়ক নিশ্চয়তা দেওয়া এবং বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে সহযোগিতা করা। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর সে প্রক্রিয়া স্থবির রেখেছে সৌদি আরব।