নটর ডেম কলেজে ছিলাম আর কত দিন, দুই বছর! এতগুলো দশক পরও এখনো পুরোটা সময়জুড়ে আছে নটর ডেম। জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধুদের তালিকায় এখনো সেই নটর ডেমিয়ান বন্ধুদেরই নাম।
কিশোরগঞ্জের তৎকালীন কুলিয়ারচর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছি। ঢাকার নটর ডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক। তারপর পড়েছি ভারতের নৈনিতালের কুমায়ূন বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতেই বসবাস করছি ২৪ বছর। কিন্তু এখনো নটর ডেমের কিছু পাওয়া গেলে সেটাকেই মনে হয় অনেক আপন। আর কলেজ শেষ হওয়ার পরও নটর ডেমকে ‘আমার’ বলে মনে হয়। আমরা যাঁরা নটর ডেমিয়ান, তাঁদের সবারই বোধ হয় এই প্রবণতা।

২০১৮ সালে নটর ডেম কলেজের গাজী আজমল স্যারের অস্ট্রেলিয়ায় বেড়াতে আসা উপলক্ষে সিডনির প্রাক্তন নটর ডেমিয়ানদের পক্ষ থেকে একটি সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলাম আমরা। একই দিনে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবারের মতো ছোট্ট পরিসরে হলেও প্রাক্তন নটর ডেমিয়ানদের পুনর্মিলনীও হয়েছিল। এর মধ্য দিয়েই আমরা গড়ে তুলি ‘নটর ডেম কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া’। কলেজজীবন পার করে আসার এত দশক পরেও সেই মাত্র দুই বছরের স্মৃতি আগলে অস্ট্রেলিয়াতেই চলে আমাদের আড্ডা।
নটর ডেমকে ঘিরে আমার অনেক অনেক স্মৃতি। মনে পড়ে নটর ডেমের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘আমার সোনালি অতীত’ শিরোনামে একটা লেখা ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাকে। অনেক স্মৃতি নিয়ে লেখা সেই লেখায় ছিল অনেক ছবি। তারপর এই তো সেই ২০২০ সালের আগে ফাদার পিশোতোর সঙ্গে ঢাকার বনশ্রীতে দেখা করেছিলাম, কথা বলেছিলাম দীর্ঘ সময়। প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে পরম মমতায়-স্নেহে সময় দিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।

নটর ডেম থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করে বের হওয়া আমার বন্ধুবান্ধবরা রয়েছে বিভিন্ন উচ্চপদে। জীবনে নানা অবস্থানে তাঁদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার চেয়ে উপস্থিতিই বহু আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। এসব কিছু মিলিয়েই স্মৃতি আর ভালোবাসার একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়ে যাবে ‘আমার’ নটর ডেম কলেজ। কিছুদিন আগে কলেজে উদ্যাপিত হলো ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। আমার মতো অনেক অভাগাই হয়তো হাজির হতে পারেনি, দূর দেশে বসে আমরা আফসোস করেছি। তবে যত দূরেই থাকি, নটর ডেম কলেজ চিরকাল ‘আমার’ই থাকবে। আমিও থাকব নটর ডেমের হয়ে।