লাতিন আমেরিকার ধাঁচে বাংলা সাহিত্যে জাদুবাস্তবতা ব্যবহারের একটা প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে জাদুটাও মুখ্য থাকে, গৌণ হয়ে পড়ে বাস্তবতা। এই যে জোর করে থিউরি কপচিয়ে সাহিত্য লেখা- এর প্রভাব সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
খানিকটা আগের প্রশ্নে এই বিষয়টার কারিগরি নিয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট করেছি। জাদুবাস্তবতা পদপ্রত্যয়টা বাংলাদেশের সাহিত্য চর্চায় বেহুদা অতি-উচ্চারিত। আমার বক্তব্য এই নয় যে, এখানকার কিছু কাজের প্রবণতাকে তুল্য বিচারে ‘জাদু বাস্তবতা’মূলক বলা যাবে না; বরং আমার বক্তব্য এই যে, যাবে কি যাবে-না তা বিচারের জন্য আমি দুর্বল লোক এবং আমি অনাগ্রহী। আমার আগ্রহ কেন কিছু লেখক ‘আমার কাজে জাদু বাস্তবতা আছে’ কিংবা ‘আমার কাছে জাদু আছে’ বলতে ব্যগ্র। এই ব্যগ্রতাটা আমার মোটের ওপর একটা অনিরাপত্তাবোধজনিত মনে হয়- ‘ইনসিকিউরিটি’। এছাড়া আরও গুরুত্ব দিয়ে বলার আছে, এই অঞ্চলের গল্পপ্রবণতার প্রাক-আধুনিক কলাকৌশলের বিষয়ে। এখানে লোকগাঁথা এবং পৌরাণিক কাহিনী অতিশয় শক্তিশালী চর্চা হিসেবে ছিল। উত্তর-ঔপনিবেশিক ‘আধুনিক’ সাহিত্য চর্চার মধ্যে সেইসব কাহিনীপ্রণালী সূক্ষ্মভাবে আসতে থাকাই বরং খুব সঙ্গত।
‘আধুনিক’ যুক্তিগ্রাহ্যতার বাইরে গল্পনির্মাণ নিয়ে তাই আচমকা লটারি পাওয়ার মতো লাফালাফি করা এই অঞ্চলের সাধারণ ইতিহাসের প্রতিও কোনো সুবিচার নয়। কিন্তু নাম জাদু বাস্তবতা দিই বা অন্য কিছু, আপনি যথার্থ বলেছেন। বাস্তবতার বিষয়ে লেখকের গভীর অনুধ্যান না থাকলে জাদুটা ঝোলের বাড়তি তেলের মতো উপরে কুৎসিতভাবে ভাসতে থাকবে। আবার বাস্তবতার বিষয়ে অনুধ্যান বা মনোযোগ লেখকের জগদ্বীক্ষা আর রাজনৈতিক সত্তার ওপর গড়ে ওঠে। এটা নিছক একটা ক্র্যাফটের বিষয় হবার কথা নয়।