পুজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। তার মতে, ডিএসইর সঙ্গে বিএসইসির বোঝাপড়া না থাকলে শেয়ারবাজার (পুঁজিবাজার) বড় হবে না।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইতে অনুষ্ঠিত ‘ডিবিএ স্টক ব্রোকার্স পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএসইসি আইন প্রণয়নের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে অংশীজনের মতামত চাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ছোট (ডিএসই) রেগুলেটর, তারা (বিএসইসি) হলো বড় রেগুলেটর। কিন্তু একটা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটা আইন পাস হয়ে যাবে! কোনো কনসালটেশন হবে না! এটা হয় না। এক সময় আমরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেছি। নিজেরা প্রতিপালন করেছি। কমপ্লায়েন্স হয়েছি। কমিশনকে আমরা সহায়ক রেগুলেটর মনে করেছি। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন পাস করার সময় প্রতিটা পদে পদে ছিলাম। আমি কতবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কমিশনে গিয়েছি আলাপ আলোচনা করেছি, তার কোনো শেষ নেই, কৃতজ্ঞতারও শেষ নেই। তা না হলে আজকে এভাবে সফল হতো না। আমরা কিন্তু কনসালটেশনের মাধ্যমে করেছি। সুতরাং পরস্পরের মধ্যে যদি কনসালটেশন, কন্টিনিউয়াস হারমোনিয়াস থাকতে হবে। তা না হলে ক্যাপিটাল মার্কেট বড় হতে পারবে না।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাসড্যাক ও নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেনিংয়ের জন্য এক মাস ছিলাম। সেখানে তারা নিজেরা দায়িত্ব পালন করে। লাইসেন্স দেয়, রেগুলেট করে, পানিশমেন্ট দেয়। এগুলো সব তারা করে। তবে বড় কোনো ঘটনা ঘটলে তখন তারা (প্রধান নিয়ন্ত্রক) এসে ইন্টারফেয়ার করে। তার আগ পর্যন্ত কিন্তু এটা সেলফ রেগুলেটের মধ্যেই থাকে। সেজন্য মনে হয়, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটকে কন্ট্রোলের (নিয়ন্ত্রণের) মানসিকতা থেকে আরও একটু ফ্রিলি কাজ করতে দিতে হবে। তাহলে স্টক মার্কেট আরও বেশি ভালো করবে।
পুঁজিবাজার বাজার ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গে বক্তব্যের একাংশে তিনি বলেন, বাজারটা ডিএসইর নিজের। বাজারে কোন পণ্য বিক্রি হবে তা ভালো বলতে পারবে বাজারের উদ্যোগতারা। কিন্তু সেই বাজারে কোন পণ্য বিক্রি হবে তা ঠিক করে দেবে অন্য আরেকজন! এটা কেমন।
তবে বাজারে কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা থাকলে তার নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব বড়দের রয়েছে বলে তিনি মন্তব্যও করেছেন।
শেয়ার বাজারে ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক করা বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল পুরস্কারের মধ্যে দ্বন্দ্ব না থাকা। যদি না থাকে তাহলে ডিএসইর সিইও কেন লিস্টিং নিয়ে কাজ করবে? কমিশন এ কাজ করবে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন মূল সিদ্ধান্ত ছিল যে আমরা সরে যাব, ট্রান্সপারেন্ট হয়ে যাব। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের প্রোডাক্ট কী হবে। প্রডাক্ট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের, ট্রেড হবে ঢাকা এক্সচেঞ্জে। ডিসাইড করে দেবে আরেকজন! কোন প্রোডাক্ট আমার বাজারে চলবে, কোন প্রোডাক্ট চলবে না। এই জায়গাটা আমি মনে করি ডিমিউচুয়ালাইজেশনের প্রথম প্রতিবন্ধকতা।
তিনি বলেন, আমাদের মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট থাকবে, মার্কেট বড় হবে। কিন্তু একটা পক্ষ আছে মার্কেটকে ছোট করে রাখতে চায়। এতে দাম বাড়বে। দাম বাড়ানো বা কমানো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাজ নয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ একটি বাজার, এখানে যত বেশি পণ্য আসবে, তত বেশি ক্রেতা আসবে। যত বড় কোম্পানি আসবে, তত বড় বিনিয়োগকারী আসবে। কারণ, যিনি মার্কেটে পুঁজি উঠাতে আসবে তার নিজের শেয়ার মার্কেটে আসবে। সুতরাং তিনি নিজেও একজন বিনিয়োগকারী। সুতরাং প্রথম কথা হল মার্কেটকে বড় করতে হবে এবং শেষ কথা হল আমাদের কাজ আমাদেরই করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মিজানুর রহমান, ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুল হালিম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান এবং এমডি ড. তারিকুজ্জামান।