তাঁর পদবি প্রধান নির্বাচক। ১ মার্চ মিনহাজুল আবেদীনেরই স্থলাভিষিক্ত হবেন গাজী আশরাফ হোসেন। তবে জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা এবং এর আগে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে থাকায় তাঁর প্রোফাইলটা বেশ ভারী। সব বিবেচনায় আগামী দুই বছর প্রধান নির্বাচক হয়েও জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক পাবেন একজন বোর্ড পরিচালকের মর্যাদা।
বোর্ডের একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে কাল নিশ্চিত করেছে, একমাত্র বোর্ড সভায় অংশগ্রহণ ছাড়া আর সবকিছুতেই একজন বোর্ড পরিচালক যে মর্যাদা ও সুযোগ–সুবিধা পান, গাজী আশরাফ পাবেন তার সবই। এর মধ্যে আছে বিদেশ সফরের বোর্ড পরিচালকদের সমান দৈনিক ভাতা, আন্তর্জাতিক মানের হোটেলে থাকা, বিজনেস ক্লাসে বিমান ভ্রমণ, আন্তর্জাতিক সিরিজের সৌজন্য টিকিটসহ আরও কিছু সুযোগ–সুবিধা। একই সঙ্গে বিসিবি থেকে প্রধান নির্বাচক হিসেবে বেতন–ভাতাও পাবেন তিনি। সেটি বিদায়ী প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের চেয়ে অনেক বেশি বলেই জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু তিনি (গাজী আশরাফ হোসেন) একসময় বোর্ডে ছিলেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় বোর্ড পরিচালকদের সমতুল্য কিছু সুযোগ–সুবিধা তিনি পাবেন। তবে পদবিতে তিনি সাবেক প্রধান নির্বাচকেরই স্থলাভিষিক্ত হবেন।’
কাল দুপুরে মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় গাজী আশরাফও আভাস দিয়েছেন, প্রধান নির্বাচক হওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার পর বিসিবি কিছু শর্ত পূরণ করাতে দায়িত্বটা নিতে তাঁর সুবিধা হয়েছে।
গাজী আশরাফ বলেন, ‘২০০৮ সালে বিসিবির আহ্বায়ক কমিটি থাকার সময় সম্ভবত পাঁচটি আইসিসি সভায় আমি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করি। এতগুলো পদে থেকে এই ভূমিকায় (প্রধান নির্বাচক) আসা, যেখানে একটা নিয়মের মধ্যে আমাকে পে রোলে কাজ করতে হবে, সেটা কঠিন ছিল। সে জন্য আমি একটা ওপেনিং স্পেস চেয়েছিলাম। বোর্ডে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবাই আসেন, কাজ করেন। আমি চেয়েছিলাম এর বাইরে এই পদবিটাকে যেন সমমানের একটা সম্মান দেওয়া হয়। সেটাকে তারা স্বাগত জানালে প্রধান নির্বাচক হিসেবে কাজ করায় সম্মতি জ্ঞাপন আমার জন্য সহজ হয়ে যায়।’
বিসিবির পরিচালক পদটা মূলত স্বেচ্ছাসেবী ধরনের, এই দায়িত্বের বিনিময়ে বোর্ড পরিচালকেরা বোর্ড থেকে কোনো বেতন–ভাতা পান না। তবে বিসিবির কোনো দায়িত্ব নিয়ে বিদেশে গেলে দৈনিক ভাতা পান ৫০০ ডলার (হোটেল ভাড়াসহ) করে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বিমান ভ্রমণ করেন বিজনেস ক্লাসে, ঘরোয়া–আন্তর্জাতিক সিরিজের সময় প্রতি ম্যাচে বিভিন্ন শ্রেণিতে সৌজন্য টিকিট পান ২৫টি, সম্মানী পান বোর্ড সভায় অংশ নিলেও।
অন্য নির্বাচকেরা দলের সঙ্গে বিদেশ সফর করলে দলের সদস্যদের মতোই দৈনিক ভাতা পান ৭৫ ডলার করে। দলের সঙ্গে না থাকলে অঙ্কটা ৩৫০ ডলারের (হোটেল ভাড়াসহ) মতো। তবে গাজী আশরাফ এসব ক্ষেত্রে পরিচালকদের মতোই সুযোগ–সুবিধা পাবেন বলে জানা গেছে। অবশ্য বিসিবির দায়িত্ব নিয়ে বিদেশ সফরে গেলে বিসিবির খরচে তিনি থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ দিন।
আমি কোন স্টাইলে কাজ করব বা করতে পারব কি না, তা সময়ই বলবে। বৃহত্তর স্বার্থে ভালো কিছুর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে সমস্যা নেই। তবে কাজে স্বাধীনতা খর্ব হলে সেটা আমার কাছে মনে হয় আপত্তিকর।
গাজী আশরাফ হোসেন, নতুন প্রধান নির্বাচক, বিসিবি
এসব সুযোগ–সুবিধা না হয় পেলেন, কিন্তু প্রধান নির্বাচক হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করার কতটুকু সুযোগ পাবেন গাজী আশরাফ? এ ক্ষেত্রে নতুন প্রধান নির্বাচকের অবস্থান বেশ কঠোরই মনে হলো, ‘স্বাধীনতা থাকবে, এই ব্যাপার আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি স্বাধীনভাবে না হলে কাজ করে কোনো আনন্দ নেই। রাস্তা সব সময় খোলা আছে। আসার রাস্তা খোলা, যাওয়ার রাস্তাও খোলা।’
আগের নির্বাচক কমিটির কাজের ধরন নিয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করেননি গাজী আশরাফ। তবে বলেছেন, ‘আমি কোন স্টাইলে কাজ করব বা করতে পারব কি না, তা সময়ই বলবে। বৃহত্তর স্বার্থে ভালো কিছুর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে সমস্যা নেই। তবে কাজে স্বাধীনতা খর্ব হলে সেটা আমার কাছে মনে হয় আপত্তিকর।’
বোর্ড পরিচালকের মর্যাদা নিয়েই যেহেতু পদটাতে বসছেন, নিজের কাজেও গাজী আশরাফ সেই মর্যাদার প্রতিফলন ঘটাবেন, এমন আশা তো করাই যায়।