নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ে কিছুটা উল্লম্ফন ঘটেছে। সদ্য সমাপ্ত মাসটিতে দেশে মোট ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এই পরিমাণ প্রবাসী আয় গত ছয় মাসে আসেনি। এর আগে গত বছরের জুন মাসে সর্বোচ্চ ২১৯ কোটি ডলার এসেছিল।
এদিকে প্রবাসী আয় বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত আরও কমেছে। কারণ, দুই বছর ধরে চলা ডলার-সংকট এখনো কাটেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলোর কাছে আমদানি দায় মেটানোর সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫০৯ কোটি ডলার, যা আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ডলার। এর আগে ২৫ জানুয়ারি মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার। বিপিএম ৬ অনুযায়ী তা ছিল ২ হাজার ২ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১৪ কোটি ডলার। আইএমএফের দেওয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা, তা বর্তমানে নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর আগে গত ডিসেম্বরে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ও নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ডলারের আয় এসেছিল।
২০২৩ সালে সব মিলিয়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১৯০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে এসেছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। এর মানে, ২০২৩ সালে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে।
সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে। তা সত্ত্বেও প্রবাসী আয়ে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, প্রতিবছর যে পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়ে থাকে, সে অনুযায়ী প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে দুই বছর ধরে চলা বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে দেশে মার্কিন ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় উঠেছে। ডলার-সংকটের কারণে আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমে গেছে। চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন না অনেক আমদানিকারক। যাঁরা এলসি খুলতে পারছেন, তাঁদের কাছ থেকে আবার ব্যাংকগুলো আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম ১২০ টাকার বেশি নিচ্ছে। কারণ, ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কিনছে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে। এরপরও বিদায়ী বছরে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়নি। যদিও গত বছর রেকর্ড পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বাংলাদেশ থেকে গত বছর বিভিন্ন দেশে ১৩ লাখের বেশি কর্মী গেছেন। দেশের ইতিহাসে কোনো একক বছরে এটিই সর্বোচ্চ জনশক্তি রপ্তানি। ২০২৩ সালে এর আগের বছরের তুলনায় বিদেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৩ শতাংশ। অথচ প্রবাসী আয় বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে প্রবাসী আয়ে তেমন প্রবৃদ্ধি হয়নি। আবার পুরুষ কর্মী বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় নারী কর্মী রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ।